Menu

কপালকুণ্ডলা 1866 খ্রি.

Last Update : October 9, 2025

কপালকুণ্ডলা 1866 খ্রি. – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের সাধারণ পরিচিতি দেওয়া হলো।

কপালকুণ্ডলা 1866 খ্রি.

রচয়িতা : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। 

প্রকৃতি : রোমান্সধর্মী ঐতিহাসিক উপন্যাস। 

বিষয়বস্তু : প্রকৃতি-দুহিতা ‘বনোন্মওা’ এক নারী বাস্তব সমাজ জীবনে প্রবেশ করে বাস্তবের সংঘাতে কিভাবে আবার প্রকৃতির কোলে ফিরে যায় – ইতিহাস ও রোমান্সের মিশ্রণে সেই কাহিনী আলোচ্য উপন্যাস এর বিষয়বস্তু। 

নামকরণ : ‘কপালকুণ্ডলা ’ নামটি সংস্কৃত নাট্যকর ভবভূতির ‘মালতিমাধব ’ নাটক থেকে সংগৃহীত। কারণ বঙ্কিমচন্দ্রের আলোচ্য উপন্যাসের কাপালিক ‘মালতিমাধব ’ নাটকের কাপালিকের দ্বিতীয় প্রতিরূপ।

রোমান্সধর্মীতা : আকৃতি ও প্রকৃতিতে ‘কপালকুণ্ডলা ’ উপন্যাস পাশ্চাত্য রোমান্সেরই বাংলা সংস্করণ। কেননা আলোচ্য উপন্যাসের অনেকগুলি পরিচ্ছেদের শুরুতে সাদৃশ্য দেখাতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র শেক্সপিয়ার, বায়রন, মেকলে,ওয়ার্ডসওয়াথ, কীটস এর রচনা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যেমন– প্রথম খন্ডের প্রথম পরিচ্ছেদের (সাগরসঙ্গমে)  শেক্সপিয়ারের ‘ Comedy of Errors থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন — “ Floating Straight obedient to the Stream.”

আরো পড়ুন--  অগ্নিবীণা 1922, কাজী নজরুল ইসলাম 

চরিত্রসমূহ : ‘কপালকুণ্ডলা’উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রগুলি হল —কপালকুণ্ডলা, লুৎফ – উন্নিসা (মতিবিবি), নবকুমার ও কাপালিক। এছাড়া গৌণ চরিত্রগুলি যথাক্রমে শ্যামাসুন্দরী, মেহেরউন্নিসা,পেষমন,সেলিম,অধিকারী ইত্যাদি। 

বৈশিষ্ট্য সমূহ

১. ‘কপালকুণ্ডলা ’ উপন্যাস চারটি একখন্ডে একত্রিশটি  পরিচ্ছেদে বিভক্ত। খন্ড গুলির কোন নাম নেই অথচ পরিচ্ছেদ গুলি শিরোনাম সম্বলিত। যেমন, দ্বিতীয় খন্ড প্রথম পরিচ্ছেদের শিরোনাম– ‘রাজপথে ’, তৃতীয় খন্ড দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের শিরোনাম — ‘ পথান্তরে’ প্রভূতি। 

২. ‘চন্দ্রশেখর ’ উপন্যাসে যেমন জ্যোতিষ গণনা, স্বপ্ন, নরক প্রভূতি অতি প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে তেমনই ‘ কপালকুণ্ডলা ’ উপন্যাসে ‘ ভৈরবী দর্শন’ প্রভুতি অলৌকিক উপাদানের প্রভাব বর্তমান। 

আরো পড়ুন--  সম্বাদ প্রভাকর 1831

৩. বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে প্রকৃতি বিচিত্র রঙ্গিনী, অঘটন -ঘটনা -পটীয়সী। যেমন –‘কপালকুণ্ডলা ’ উপন্যাসে প্রকৃতি মহাপ্রকৃতি পরাশক্তির প্রতীক,প্রকৃতি যেন দূরচারিণী মৃগতৃষ্ণিকা। 

৪. আলোচ্য উপন্যাসে ‘কপালকুণ্ডলা ’ প্রণয় -সংস্কার বরজিতা, ‘ মেহের’ প্রণয় শালিনী, ‘শ্যামা ’ প্রণয়বুভুক্ষ হয়েও প্রণয় – বঞ্চিতা এবং ‘লুৎফ-উন্নিসা’ ভোগসর্বস্ব কামনার প্রদীপ্ত শিখা। এই চারটি চরিত্র যেন নারী প্রকৃতির বিচিত্রার  চারটি রূপ। 

৫. ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসে দুটি স্বপ্ন -বৃত্তান্ত আছে– একটি কাপালিকের স্বপ্ন আর একটি কপালকুণ্ডলার স্বপ্ন।এক বিশিষ্ট সমালোচক‘কপালকুণ্ডলা ’উপন্যাস সম্পর্কে বলেছেন – “ কপালকুণ্ডলাভাবনায় কাব্য,প্রকাশভঙ্গিতে নাটক আর  জীবন – জিজ্ঞাসায় উপন্যাস। কাব্য নাটক আর উপন্যাসের এমন সার্থক মিলন বাংলা সাহিত্যে কমক ঘটেছে। ”

৬. বাক্যগত ঘটনাগত শ্লেষ (Irony) -এর মাধ্যমে ‘কপালকুণ্ডলা ’ উপন্যাসে যে নাটকীয় ভাবমণ্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে, তাও যথেষ্ট তাৎপর্যবহ। যেমন, অধিকারী কপালকুণ্ডলাকে বলেছেন— ‘ পতি শ্মাশানে গেলে তোমাকে সঙ্গে সঙ্গে যাইতে হইবে। ’

আরো পড়ুন--  অন্নদামঙ্গল ১৭৫১ খ্রি.

৭. ‘কপালকুণ্ডলা ’ উপন্যাসে দুটি বিশিষ্ট ঘটনার মধ্য দিয়ে নিয়তির কর্মরেখা ফোটানো হয়েছে। যেমন – কপালকুণ্ডলা -অধিকারী -নবকুমার -কাপালিক প্রসঙ্গ এবং মতিবিবি -নবকুমারপ্রসঙ্গ। 

৮. কপালকুণ্ডলার পরিকল্পনা, কাহিনীর নির্মাণ কৌশল, ভাবের ঐক্য, কাব্যধর্ম, নাটকীয় গুন, রোমান্সের অভিনবত্ব, প্রকৃতি চিন্তা প্রভূতি বঙ্কিম প্রতিভার আনন্দ স্ফূর্তি। এইসব গুণেই ‘ কপালকুণ্ডলা ’ অভিনব ও দ্বিতীয় রোহিত এবং এখানেই বঙ্কিমচন্দ্র সৌন্দর্যের শার্লক হোমস্।


আধুনিক যুগ থেকে সাহিত্য টীকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: সংরক্ষিত !!